বরিশাল ব্যুরো : চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৪২ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে পিরোজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক রিয়াজুল ও জেলা জজ কোর্টের পিয়ন মোঃ ফোরকান হোসেনের বিরূদ্ধে । বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে প্রতরনার মাধ্যমে নগদ ও চেকের মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা আত্মসাত করেন তারা। চাকরী না পেয়ে টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন হুমকি ধামকিসহ হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে জানান চাকুরী প্রত্যাশ্যি ওই পরিবারটি। এ ঘটনায় রথীন্দ্রনাথ রায় নামের এক ভুক্তভোগী গত ২৯ আগষ্ট পিরোজপুর জেলা প্রশাসক সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
কিন্ত এ বিষয়ে কোন সূরাহা না পেয়ে অভিযোগকারী রথীন্দ্রনাথ রায় পিরোজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযুক্ত ২ প্রতারকের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করেছেন। তবে চাকুরীর প্রলোভনে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি সরাসরি স্বীকার না করলেও অফিস সহায়ক রিয়াজুল ইসলাম এ প্রতিবেদকের কাছে সমঝোতার প্রস্তাব দিযেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের আর. এম শাখার অফিস সহায়ক রিয়াজুল ইসলাম ও পিয়ন ফোরকান ওই ভুক্তভোগী সহ ৪ জনকে জেলা জজ কার্যালয়ে চাকরি দেয়ার কথা বলে ৪২ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী রথীন্দ্রনাথ এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কর্মচারী রিয়াজুল ও পিয়ন ফোরকান গং গত ১২ এপ্রিল আমাকে একটি চাকরির বিজ্ঞাপন ও প্রবেশ পত্র দেখিয়ে আমাকে চাকরি পাইয়ে দেবে বলে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে। এমনকি চাকরী শতভাগ নিশ্চিত বলে আমাকে আস্বস্থ্য করে তারা। যেহেতু উল্লেখিত দুজন ডিসি অফিসের কর্মচারী তাই সরল বিশ্বাসে পিরোজপুরের হোটেল অবকাশ এর মোড়ে মিনি চাইনিজ রেস্তোরাঁ কাজী চিকেনে বসে তাদের দাবিকৃত ১০ লক্ষ টাকা —- হাতে তুলে দেই। পরে আমার চাকরি না হওয়ায় খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারি ঐ বিজ্ঞপ্তি ও প্রবেশ পত্র ভূয়া ছিল। এমনকি সংশ্লিষ্ঠ অফিসে কোন জনবল নিয়োগ করা হবে না। বিষয়টি আমি পিরোজপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক রিয়াজুল ও জেলা জজ কোর্টের পিয়ন মোঃ ফোরকানেকে জানালে তারা উভয়ই আমার ফোনের লাইন কেটে দেয়।। পরে আমি টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্ন লোক দিয়ে আমাকে ভয়ভীতি দেখায়। এমনকি এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমাকে হত্যা করা হবে বলেও শাসায়। আরেক ভুক্তভোগী শন্তু মন্ডল জানান, রিয়াজ আমাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ১০ লক্ষ টাকা নিয়েছে। কিন্তু আমার চাকরি হয় নাই। অপর আরো এক ভুক্তভোগী শিপু ঘরামী বলেন, আমরা চারজনে মিলে ১০ লাখ টাকা করে দুইবার মোট ২০ লক্ষ টাকা ও বিভিন্ন বিকাশ একাউন্টে আরো নগদ ২২ লাখ টাকাসহ মোট ৪২ লাখ টাকা দিয়েছি। তাদের নিখুঁত অভিনয়ের কিছুই বুঝতে পারিনি। প্রত্যেকবার টাকা দেবার সময় রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত ছিলেন এবং তার হাত থেকেই ওরা এই ২০ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন। বাকী টাকা আগ্রহী ব্যাংক পিরোজপুর জেলা পরিষদ শাখা ও বিভিন্ন বিকাশ একাউন্ট ও নগদে পাঠানো হয়। যার সকল প্রমান আমাদের কাছে রয়েছে। তিনি বলেন চাকরীর প্রলোভনে প্রতারনার শিকার হয়ে আমি এখন নি:শ্ব হয়ে পরেছি।
অভিযুক্ত রিয়াজুলকে মোবাইল করা হলে তিনি টাকা আত্মসাতের সাথে জিড়িত নন বলে দাবী করেন। তবে তার ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে এমন প্রমানের কথা বলা হলে তিনি বলেন আমার একাউন্টে ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। কেন তিনি ১ লাখ টাকা দিয়েছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি। তবে এ বিষয়ে তিনি সমঝোতা করতে চান বলেও এ প্রতিবেদককে বলেছেন। এ ব্যাপরে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, এ বিষয়ে আমি একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মনিরা পারভিনকে তদন্ত পূর্বক ব্যাবস্থা গ্ৰহন করতে বলেছি।তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি অভিযুক্ত অফিস সহায়ক মো : রিয়াজুল ইসলাম বহাল তবিয়তে চারকি করছেন। এতনকি টাকা চাইলে লোকজন দিয়ে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ভূক্তভোগীরা।
Leave a Reply