বরিশাল : মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি ও আরটিভির প্রতিনিধি সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী খান জসিমের ছেলে মুসাব্বির খান জারিফের মরদেহ তিন সপ্তাহ পরে কবরস্থান থেকে তুলে ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আবু আব্দুল্লাহ খানের উপস্থিতিতে বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১ টায় বরিশাল নগরের মুসলিম গোরস্থান থেকে তার মরদেহ উত্তোলন করে সুরতহাল শেষে মরদেহ বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয় বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আমানুল্লাহ আল বারী। তিনি বলেন, গত ৭ ফেব্রুয়ারি জারিফের বাবা মোহাম্মদ আলী খান জসিম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। যে মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে মৃতের পিতা মোহাম্মদ আলী খান জসিম জানান, চলতি বছরের গত ২৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নিজ ইচ্ছের বিরুদ্ধে বন্ধুদের সাথে বরিশাল নগরের কাটপট্রি এলাকার নিজ বাসা থেকে মাদারীপুরের উদ্দেশ্যে বের হয়। মাদারীপুর পৌঁছে একাধিকবার পরিবারের সাথে যোগাযোগ হয় এবং ২৮ জানুয়ারি জারিফ তার মাকে চলে আসার কথাও জানায়। তিনি বলেণ, ২৮ জানুয়ারি রাত ১২ টার দিকে জারিফের মোবাইলে ফোন করা হলে রিসিভ করেনি সে। পরবর্তীতে ২৯ জানুয়ারি বেলা ১২ টায় আবারো জারিফের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তখনও সে রিসিভ করেনি। এ নিয়ে চিন্তার এক পর্যায়ে জারিফের বন্ধু বিকি’র মোবাইলে কল দিলে সেও রিসিভ করেনি। পরে বিকেল ৩ টার দিকে বিকি তার মোবাইল ফোনের কল রিসিব করে জানায় আমার ছেলে জারিফ মাদারীপুর লেকে গোসল করতে গিয়েছিলো বিধায় ফোন ধরতে পারেনি। তখন কথা বলতে চাইলে জারিফ বাড়ির সামনে গেছে জানিয়ে বিকি ফোন কেটে দেয়। এদিকে ২৯ জানুয়ারি আসরের পর জারিফের তিন বন্ধু দ্বীপ, ইব্রাহিম ও রাজন আমাদের বরিশালের বাসায় এসে জানায় জারিফের হাফানি বা শ্বাস কষ্টের কোন রোগ রয়েছে কি না। তখন আমি এ ধরনের কোন রোগ নেই জানিয়ে তাদের কাছে কি হয়েছে জানতে চাই। ওইসময় তারা একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে কথা বলতে বললে, সেখানে কল দেয়া মাত্র জানতে পারি জারিফ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। পরে সেখান থেকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে আমার ছেলে জারিফকে নিয়ে রওয়ানা দেয় বন্ধুরা। পথিমধ্যে আমার ছেলে, বিকিসহ হাসপাতালে যোগাযোগ করা মোবাইল নাম্বারে কল দিলেও তারা রিসিভ করেনি। তবে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে যখন জারিফকে বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আসা হয় তখন চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। পরে স্বাভাবিকভাবেই জারিফের দাফন সম্পন্ন করি। কিন্তু সময় অতিবাহিত হলে বন্ধুদের কাছ থেকে পাওয়া জারিফের মোবাইল খতিয়ে দেখে বিভিন্ন ছবিসহ ডাটা খুজে না পাওয়া, মৃত্যুর কয়েকদিন পর মোটরসাইকেল উদ্ধার হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয়দের দেয়া বিভিন্ন তথ্যে জারিফের মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলে নিশ্চিত হই। এছাড়া যারা মাদারীপুরে জারিফের সাথে ছিলো তারমধ্যে বিকি হাসপাতালেও আসেনি এমনকি আমাদের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ করেনি। আবার যে অংকনের নানাবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলো তার পরিবারসহ অন্য বন্ধুরাও যা বলছে তাদের একজনের সাথে অন্যজনের কথার মিল নেই। তিনি বলেন, আমি মনে করি জারিফকে মাদারীপুর হাসপাতালে ভর্তি করাসহ মৃত্যুর রহস্য চাপিয়ে রাখার পেছনে বড় ধরনের কোন অপরাধ সংগঠিত হয়েছে এমনটাই আমরা জানতে পেরেছি। এককথায় আমার ছেলেকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিষাক্ত নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করিয়ে হত্যা করা হয়েছে, যে কারনে চারজনের নাম উল্লেখ করে আমি একটি হত্যা মামলা দায়েরও করেছি। আমি চাই আমার ছেলে হত্যার সঠিক কারণ উদঘাটন হোক এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
Leave a Reply