বিশেষ প্রতিনিধি : রাজনীতিতে মো. শাহে আলম সিডর এর ঝরে ভেসে আসা একটি নাম নয়, মো. শাহে আলম হল আওয়ামী রাজনীতির একটি প্রতিষ্ঠান, তিনি কাউর পা ধরে বা কাউকে তৈল দিয়ে বা কাউর চামচামি করে বা কাউর সুপারিশ নিয়ে এম.পি হননি, সরাসরি জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে নৌকার টিকেট দিয়েছেন। তাই তাকে নিয়ে যদি কেউ ষড়যন্ত্র করে তাহা হবে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র এর শামিল। বর্নাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্যই তিনি আজ এম.পি।
মো. শাহে আলম শুধু বানারীপাড়াই নয় গোটা দক্ষিনাঞ্চলসহ সারা বাংলাদেশের একটি অনন্য নাম, একটি পরিচিত মুখ, আদর্শ-সততা মিশ্রিত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে লালিত রাজনৈতিক নেতা। জনদরদী মানবহিতৈষী সমাজসেবক। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের রূপকার, রাজপথের সাহসী যোদ্ধা, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সফল সভাপতি,৯০ দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের VP CANDIDATE, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংগঠক,জননেত্রী শেখ হাসিনার স্নেহভাজন এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।
শাহে আলম এর জন্ম তার মাতৃলয়ে বরিশাল বিভাগের উজিরপুর থানার ভবানীপুর গ্রামের মুন্সি বাড়িতে। ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সংগ্রামী নেতা স্বর্গীয় কুমুদবিহারী গুহ ঠাকুরদা ও প্রয়াত মোজাম্মেল হক এর হাত ধরে শাহে আলম এর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। স্কুলে পড়া অবস্থায় তিনি বানারীপাড়া ছাত্রলীগের মিছিল মিটিং এ নিয়মিত অংশগ্রহন করতেন।
১৯৭১সালে অষ্টম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছাত্র শাহে আলম ও তার সহপাঠী অহিদুজ্জামান দুলাল, আব্দুল হাই, সুলতানসহ আরো অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য নাজিরপুর হাই-স্কুলে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা জনাব হাবিবুর রহমান, মীর শাহজাহান প্রমুখদের কাছে তাদের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। এই কিশোর শাহে আলমের সাহস, দেশের প্রতি ভালবাসা দেখে ঐ মুক্তিযোদ্ধারা মুগ্ধ হন। কিন্তু তাদের বয়স কম হওয়ায় তারা শাহে আলমসহ অন্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের পিতামাতার কাছে পাঠিয়ে দেন।
১৯৭৩ সালে বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনষ্টিটিউশন (উচ্চ বিদ্যালয়) থেকে এস.এস.সি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ন হয়ে শাহে আলম সরকারী ব্রজমোহন কলেজে ভর্তি হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। দ্বাদশ শ্রেনীতে পড়ুয়া ছাত্র শাহে আলম বিএম কলেজসহ গোটা বরিশাল অঞ্চলের ছাত্রদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে আন্দোলন প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। দ্বাদশ শ্রেনীতে থাকা অবস্থাতেই শাহে আলম দক্ষিনাঞ্চলের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় নামে খ্যাত বরিশাল বিএম কলেজের হোস্টেল ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশের চারদিকের পরিবেশে যখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করে তখন শাহে আলমের নেতৃত্বে বরিশাল দক্ষিনাঞ্চলের ছাত্রলীগ সংঘবদ্ধভাবে রাজপথে নেমে পড়েন। এই আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে শাহে আলম নানা রকম মামলা, হামলা, নির্যাতনের শিকার হন।। এমনকি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে শাহে আলম ১৯৭৫ সালের ৮ ডিসেম্বর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারেননি। অবশেষে ১৯৭৬ সালে বি.এম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ন হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মাত্র ১৮ দিনের মাথায় শাহে আলম সকল ছাত্রের সম্মতিক্রমে জহিরুল হক হলের ছাত্রলীগের ORGANISING SECRETARY
নির্বাচিত হন। তারপর তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির PATHAGHAR SOMPATHOK নির্বািচত হন। এরপর তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির JOINT SECRETARY নির্বাচিত হন। তারপর তিনি ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির VICE PRESIDENT নির্বাচিত হন। এক পর্যায়ে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির PRESIDENT নির্বাচিত হন।
১৯৮১ সালের ১৭ মে জননেত্রী শেখ হাসিনার নিজ দেশে শুভাগমন উপলক্ষে তিনি ছাত্রলীগকে সংঘবদ্ধ করে বিমানবন্দরে গিয়ে তাকে বরন করেন। তিনি স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলেন। স্বৈরশাসক এরশাদ ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলাদেশে যখন সকল প্রকার গনতান্ত্রিক কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছিল তখন এই সংগ্রামী নেতা শাহে আলম শপথ করেছিলেন শত মামলা, হামলা, নির্যাতন আসুক না কেন স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটাবই। তিনি সর্বশক্তি নিয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন এবং স্বৈরাচারের পতন ঘটান।
আজীবন আন্দোলন সংগ্রামী নেতা শাহে আলম শুধু রাজনীতি নিয়েই থাকতেন না তিনি একাধারে ফুটবল ক্রিকেট খেলায় ছিলেন পারদর্শী। তিনি বানারীপাড়া, উজিরপুর, ধামুরার বিভিন্ন ক্রিড়া ও সাংস্কৃতিক ক্লাবের সংগে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি কখনও স্কৈরশাসক, লুটপাটদের সাথে আপোষ করে চলেননি। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি,সমাজসেবামূলক কার্যক্রম ও মানবকল্যানে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
অবশেষ নৌকা প্রতিকে বিজয়ী হয়ে ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারী বরিশাল-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ পড়েন।
Leave a Reply