নিকুঞ্জ বালা পলাশ, বরিশাল ব্যুরো : একটি ইজিবাইকে সাইড দিতে গিয়ে ঝালকাঠির ছত্রকান্দা এলাকায় পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে বরিশাল গামী বাশার স্মৃতি পরিবহন নামের একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুকুরে পরে মহিলা ও শিশুসহ ১৭ যাত্রী নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ জন নারী ৬ জন পুরুষ ও ৩ জন শিশু রয়েছে। এ সময় দূর্ঘটনাকবলিত ওই বাস থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২৩ যাত্রী। এদের মধ্যে প্রত্যেকেই কমবেশি আহত হয়েছের। শনিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় ঝালকাঠী সদর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। দূর্ঘটনায় আহতদের উদ্ধার করে ঝালকাঠী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ঘন্টাব্যাপী চেষ্ঠা চালিয়ে দূর্ঘটনাকবলিত বাসটি উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের কান্নায় ভাড়ি হয়ে ওঠে পুরো এলাকা।
প্রতক্ষদর্শি ও পুলিশ সূত্র জানায়, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে ৬০জন যাত্রী নিয়ে বরিশালের দিকে যাচ্ছিলো ঢাকা মেট্রো-ব ১৪-৬৫৪৯ বাশার স্মৃতি পরিবহন নামের বাসটি । পথে যাত্রী তুলে ৭০/৮০জন যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে চলতে থাকে। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে পথিমধ্যে সদর উপজেলার ছত্রকান্দা এলাকায় পৌছলে ইউপি ভবনের সামনের মোড় ঘুরতেই একটি ইজিবাইকে সাইড দিতে গিয়ে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের পুকুরে পড়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা ছুটে এসে দূর্ঘটনা কবলিত বাসে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার চেষ্টা শুরু করে। খবর পেয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই ফায়ারসার্ভিস ও থানা পুলিশের একাধিক দল ঘটনাস্থলে পৌছে পুরোপুরি উদ্ধার অভিযান শুরু করে। এসময় বাসের গ্লাস ভেঙ্গে ২৫জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হলেও এরমধ্যে ১৫ জনযাত্রী নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি । পরে জেলা পুলিশের উদ্ধারযন্ত্র ঘটনাস্থলে পৌছে দুপুর সাড়ে ১২ টায় দূর্ঘটনা কবলিত বাসটি উদ্ধার করে। এসময় বাসের ভীতর থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে মৃত্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭ জনে। এছাড়া আহতাবস্থায় উদ্ধার হওয়া সর্বমোট ২৫ জনকে ঝালকাঠী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে এখনো নিখোঁজ রয়েছে এক শিশু। পুকুরে এখনো কোন লাশ রয়েছে কিনা তা দেখতে দুটি সেচ পাম্প বশিয়ে পুকুরের পানি কমানো হচ্ছে।
ঝালকাঠি থানার অফিসার ইনচার্জ নাসির উদ্দিন সরকার জানান, এখন পর্যন্ত আটজন নারী, ছয়জন পুরুষ ও তিন শিুশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত অবস্থায় ২৫ জনকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত যাদের পরিচয় জানা গেছে তাঁরা হলেন ১. তারেক রহমান (৪৫) পিতা পান্না মিয়া ভান্ডারিয়া পৌরসভা থানা ভান্ডারিয়া, ২. সালাম মোল্লা (৬০) পিতা মুজাফফর আলী ভান্ডারিয়া পৌরসভা থানা ভান্ডারিয়া ৩. খাদিজা বেগম (৪৩) স্বামী-মৃত মাওলানা নজরুল ইসলাম ৪. খুশবো আক্তার (১৭) পিতা মাও. নজরুল ইসলা গ্রাম নিজামিয়া থানা রাজাপুর, ৫. শাহীন মোল্লা (২৫) পিতা মৃত সালাম মোল্লা ভান্ডারিয়া পৌরসভা থানা ভান্ডারিয়া, ৬. সুমাইয়া (৬) পিতা জালাল হাওলাদার গ্রাম পশারিবুনিয়া ভান্ডারিয়া ৭. আবদুল্লাহ (৮) পিতা দেলোয়ার হোসেন গ্রাম চর বোয়ালিযা বাখরগঞ্জ ৮. রহিমা বেগম (৬০) স্বামী মৃত লাল মিয়া রিজাভ পুকুর পাড় ভান্ডারিয়া ৯. আবুল কালাম হাওলাদার পিতা মৃত লাল মিয়া হাওলাদার ১০. রিপামনি (২) পিতা- রিপন মেহেদীগঞ্জ সদর ১১. আইরিন আক্তার (২২) স্বামী রিপন হাওলাদার মেহেদীগঞ্জ ১২. নয়ন (১৬) পিতা নজরুল ইসলাম বলাইবাড়ি রাজাপুর, ১৩. রাবেয়া বেগম (৮০) স্বামী মৃত ফজলুল হক মৃধা উত্তর শিয়ালকাঠি ভান্ডারিয়া, ১৪. সালমা আক্তার মিতা (৪২) পিতা তৈয়বুর রহমান বাশবুনিয়া কাঠালিয়া ।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত যাদের নাম জানা গেছে তাঁরা হলেন, আবুল বাশার কাঠালিয়া, রাসেল মোল্লা ভান্ডারিয়া, ফাতিমা ভান্ডারিয়া, রাসেল ভান্ডারিয়া, মিফতা নলছিটি, রিজিয়া কাঠালিয়া, রিজিয়া কাঠালিয়া, আরজু কাঠালিয়া, মনোয়ারা রাজাপুর, সুইটি ভোলা, রুকাইয়া বাউফল, আজিজুল নলছিটি, আলাউদ্দিন রাজাপুর, সোহেল রাজাপুর, আবুল কালাম রাজাপুর, আকাশ বরগুনা, সোহাগ সাতক্ষিরা, নাঈমুল মঠবাড়িয়া, সিদ্দিকিুর বাউফল, মনিরুজ্জামান ভান্ডারিয়া, আল-আমিন ঝালকাঠি, সাব্বির বরিশাল। এ ছাড়া দুইজনকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে
ঝালকাঠী সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিতসক ডা. বৈশাখী বড়াল নিহত ও আহতদের সংখ্যা নিশ্চিত করে বলেন, চিকিৎসাধীন বেশ কয়েক জনের অবস্থা গুরুতর।
দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে আহত যাত্রী রাসেল মোল্লা জানান, ৪০ আসনের বাসটি সকাল ৮.৪৫ মিনিটে ভান্ডারিয়া থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছাড়ে। পথি মধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে যাত্রী ওঠানোর ফলে যাত্রী সংখ্যা হয় প্রায় ৭০ জন। বাসটির ছাদেও কয়েকজন যাত্রী ছিল। বাসটি দ্রুত গতিতে ঝালকাঠির ছত্রকান্দা ধানসিড়ি ইউনিয়ন পরিষদ অতিক্রমকালে চালক মোহন সুপারভাইজারের সাথে কথা বলছিল , এ সময় হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি সড়কের বামদিকের পুকুরে পড়ে যায়। ধানসিড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম মাসুম বলেন, আমি পরিষদে লোকজন নিয়ে বসে ছিলামা। হঠাৎ শব্দ শুনে বের হয়ে দেখি বাসটি পুকুরে পড়ে গেছে। এর মধ্যে পরিষদে যারা ছিল এবং আশপাসের লেঅকজন ছুটে এসে যে ভাবে পাড়ে লোকজনকে বাচানোর চেস্টা করে। উদ্ধার কাজে অংশ নিয়ে আহত হওয়া স্থানীয় ইউপি সদস্য ফয়সাল রহমান বাবু বলেন, দুর্ঘটনার সময় আমি পরিষদের সামনেই ছিলাম। পুলিশ এবং দমকলবাহিনী পৌছার আগেই আমরা ৫০/৬০ জন মিলে উদ্ধার অভিযান শুরু করি। তিনি আরও বলেন সড়ক মহাসড়কের পাশে পুকুর বা জলাশয় থাকার কারণে মৃতের সংখ্যা বেশী হয়েছে। মহাসড়কের কাছে পুকুর খনন বন্ধ করা উচিত। ঝালকাঠি বাসমালিক সমিতির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মু: নাসির উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনা কবলিত বাসের ড্রাইভার এবং সুপারভাইজারের কোন সন্ধ্যান পাওয়া যায়নি। হেলপার আকাশ (১৭) কে পাওয়া গেছে। ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল বলেন, পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের স্যারের পক্ষ থেকে লাশ দাফন ও পরিবহনের জন্য এক লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান ১৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়ের করা হবে ।
Leave a Reply